Skip to main content

পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সমাচার


লিখেছেন : আশিক মাহমুদ রিয়াদ


পিরোজপুর এসেছেন অথচ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড আসেননি। এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন৷ পিরোজপুর আসতে হলে আপনাকে পুরতন বাস স্ট্যান্ড নামতেই হবে। নতুন বাস টার্মিনাল হওয়ার পূর্বে এটিই ছিলো পিরোজপুরের প্রধান বাস টার্মিনাল৷ অনেক বছর আগের কথা তখন বলেশ্বর ব্রীজ নির্মিত হয়নি। নদী পারাপারের জন্য ছিলো নৌকা৷ আর পিরোজপুরের প্রধান বাসস্ট্যান্ড ছিলো এটি।এখান থেকে সে সময়ে পিরোজপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাস ছেড়ে যেত। তাছাড়াও বরিশাল বিভাগে যাতায়াতের জন্য। 

বাসস্ট্যান্ড না থাকার কারনে বাসগুলো সব রাস্তায় লম্বা লাইন করে রাখা হতো৷ 

ইন্দুরকানী-ভান্ডারিয়া সড়ক ব্যবহার হতো। সময়ের বিবর্তনে পিরোজপুরের উন্নয়নের অগ্রযাত্রার অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে পিরোজপুর নতুন বাসস্ট্যান্ড নির্মিত হওয়ার পরে এ বাসস্ট্যান্ড টি পুরাতন বাসস্ট্যান্ড নামে পরিচিতি লাভ করে। তবে নামের আগে পুরতন এসেছে বলে এটি একেবারেই পুরাতন হয়ে যায়নি।এখনো আছে ঠিক আগের মতোই। সকাল হলেই বাসের হর্ণ আর মানুষের কোলাহলে মুখরিত থাকে এ জায়গাটি। এখান থেকে প্রতিদিন পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া,ইন্দুরকানী,মঠবাড়ীয়া উপজেলায় বাস ছেড়ে যায় । এছাড়াও খুলনা-বরিশাল মহাসড়ক হওয়ায়,প্রতিদিন বাগেরহাট,খুলনা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে বাস ছেড়ে যায় এখান থেকে।

সকাল হলে যেমন  গন্তব্যের জন্য মানুষের পদচারণায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে এ জায়গাটি। ঠিক সন্ধ্যে হলেই এখানে জমে আড্ডার কারখানা। সারাদিনের ব্যস্ততা শেষ করে রিফ্রেশমেন্টের জন্য এখানে আসে মানুষজন। চায়ের কাপে জমে আড্ডা ।আড্ডায় কখন সময় পেরিয়ে যায় ধরতে পারে না কেউ৷

পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এসেছেন আর এখানকার গরুর দুধের চা না খেয়ে যাবেন কোথায়? চা আপনাকে খেতেই হবে, আর এখানের চা একবার খেলে  আপনাকে এখানে আসতে হবে বারবার৷ শুধু কি চা খেলেই হবে?
পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এসেছেন আর এখানের হালিম খাবেন না? তাই কখনো হয়? তবে এখানে এসেই প্রথমে চা খাবেন না৷ প্রথমে খাবেন কাবাব আর নান,তারপরে যাবেন হালিমের কাছে। এক বাটি হালিম খেয়ে প্রশান্তি নিয়ে ঢেকুর তুলতে তুলতে যাবেন চায়ের দোকানের কাছে। সেখানে গিয়ে তৃপ্তি করে চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিয়ে কল্পনা করতে হারিয়ে যাবনে অন্য কোথাও। সাবধান! উদাসীন হয়ে আবার বাসের নিচে চাপা পড়বেন না যেন।খুলনা-বরিশাল মহাসড়ক কিন্তু এখান থেকেই চলে গিয়েছে৷ খাওয়া-দাওয়া তো হলো এবার একটু বিশ্রাম করতে হবে তাই না? মুখে একটা পান গুজে চায়ের দোকানের পাশেই পাবেন ছোটখাট একটা লাইব্রেরী। লাইব্রেরীর নাম, 'সুর্যদয় গ্রন্থগার।' সেখানে গিয়ে পান চিবোতে চিবোতে পত্রিকার পাতায় চোখ বোলাতে পারেন৷

গরমের সময়ে বলেশ্বর ব্রীজ থেকে হাওয়া-বাতাস গায়ে লাগিয়ে এসে এখানকার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে অন্তর ঢান্ডা করতে পারেন
বর্ষার দিনে দুপুর বেলা কাজ না থাকলে বৃষ্টিতে ভিজে চা খেতে পারেন। গুড়িগুড়ি বৃষ্টিতে একদিন হালিম খেয়ে দেখবেন৷ মন ভরে যাবে।

শীতের দিনে সকাল সকাল উঠে চলে আসতে পারেন পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে গরম চা আর সিগারেট প্রেমীদের জন্য এ যায়টা অত্যান্ত সুন্দর। ঠিক সন্ধ্যে বেলায় এখানে পাবেন শীতের বিভিন্ন রকমের পিঠা।পিঠা আর চায়ের কম্বিনেশনে পুরাতন বাসস্ট্যান্ডের প্রতি আপনার একধরনের মায়া হবেই। পিরোজপুরের সদরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড যেন মানুষের মিলন মেলার স্থল।
চায়ের দোকানে চা খেতে খেতে দেখা হয়ে ই যেতে পারে আপনার পুরনো কোন বন্ধুর সাথে। 'আরে তুই?' বলে উচ্ছ্বসিত হয়ে দুজন মোলাকাত করে আরো দু কাপ চা খাবেন না তাতে কোন সন্দেহ নেই।

Comments

Popular posts from this blog

পিরোজপুর সদরের কিছু উল্লেখযোগ্য মজাদার খাবার ও খাবারের স্থানের নাম

১.আইচ পুরি ভান্ডার এর পুরি।দামুদার ব্রীজের ঠিক এক পাশেই ছোট্ট করে এই পুরির দোকান  । অনেক জায়গায় পুরি খেলেও এটাকে আপনার বেস্ট বলতে হবে কারন ডাল পুরিতে অনেক ডাল এবং আলু পুরিতে অনেক আলু দেয়।  সন্ধ্যার পর ভরপুর গরম গরম পুরি খাওয়ার লাইন‌ লাগে এই দোকানে । প্রতিটা পুরি মাত্র ৫ টাকা। যে পরিমাণ আলু,ডাল ‌ঠুসায় সেই তুলনায় দাম কমই বলা চলে।ট্রাই করতে পারেন কোন এক সন্ধ্যায় । ২.সিও অফিস, ডাচ বাংলা বুথের পাশের চায়ের দোকানের গরুর দুধের চা। ৩.জেলা পরিষদ সুপার মার্কেটে অবস্থিত ক্যাফে স্ট্রিট ফুড এর মালাই চা।পরিবেশন স্টাইল দারুন।দাম মাত্র ১৫ টাকা। ৪.দুলালের দধি ভান্ডারের রসগোল্লা, রসমালাই, দধি। ৫.ভাই ভাই মিস্টির দোকানের রসগোল্লা,দধি,রসমালাই। ৬.বেকুটিয়া ফেরিঘাটের রাস্তার পাশের ঝাল মুড়ি। ৭.পিরোজপুর পুরান বাসস্ট্যান্ডে খুলনা বাস কাউন্টারের পাশে দোকানের চিতই পিঠা।পিঠার সাথে মরিচ ভর্তা আর সরিষা ভর্তাটা জোশ লাগে। ৮.শেরে বাংলা মার্কেট এর বিপরীতে স্টার হোটেলে হট কফি। ৯.সিও অফিসের ওখানে ক্যাফে আল মদিনার চকলেট হট কফি,চকলেট কোল্ড কফি । দাম ৫০-৬০ টাকার মত লিখেছেন :জি,এম-আদল

পিরোজপুর জেলার দর্শনীয় স্থান সমূহ

    লিখেছেন : জি,এম-আদল পিরোজপুর বাংলাদেশের দক্ষিনাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা।প্রকৃতি তার নিজ সাজে অপরুপ সৌন্দর্যে পিরোজপুর জেলাকে সাজিয়েছেন। নদীবিধৌত জেলা পিরোজপুরে রয়েছে সেরা কিছু দর্শনীয় স্থান।পিরোজপুর সদর, ইন্দুরকানি, নাজিরপুর, কাউখালী, ভান্ডারিয়া, মঠবাড়ীয়া, নেছারাবাদ এই সাতটি উপজেলা নিয়ে পিরোজপুর জেলা গঠিত। এই উপজেলাগুলোর প্রায় প্রতিটি উপজেলারই রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, রয়েছে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান।সেরা দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে ভাসমান পেয়ারা হাট, কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা,রায়েরকাঠি জমিদার বাড়ি,হরিনপালা রিভারভিউ ইকো পার্ক, ভান্ডারিয়া শিশু পার্ক,ভান্ডারিয়া মিয়া বাড়ি মসজিদ,মঠবাড়িয়ার মমিন মসজিদ, পিরোজপুর এর ডিসি পার্ক ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।  ভাসমান পেয়ারা হাট : পিরোজপুর জেলার স্বরুপকাঠি উপজেলার আটঘর,কুরিয়ানা নামক জায়গায়  নৌকায় করে এই (Floating Market) ভাসমান পেয়ারা হাট বসে। কবি আহসান হাবিব এর পৈত্রিক ভিটা: কবি আহসান হাবীব একুশে পদক ও স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলা ভাষার অন্যতম একজন খ্যাতনামা কবি।  আহসান হাবীব এর জন্ম ১৯১৭ সালের ২ জানুয়ারি,পিরোজপুর সদর...

পিরোজপুর জেলা নামকরণের ইতিহাস

পৃথিবী সৃষ্টির পিছনে যেমন ইতিহাস রয়েছে ঠিক তেমনি পৃথিবীর প্রতিটি দেশ,বিভাগ,জেলা ও এলাকা সৃষ্টির পিছনে রয়েছে হাজারো গল্প ও ইতিহাস। তেমনি পিরোজপুর জেলা সৃষ্টি ও নামকরণের পিছনেও রয়েছে নানা গল্প ও ইতিহাস। গবেষকদের মতে,আজকের এ পিরোজপুর সুলতানি আমলে বাকলা-চন্দ্রদ্বীপের অন্তর্ভুক্ত ছিল। এ অঞ্চল পরিচিতি ছিল ফিরোজপুর নামে। মোগল সম্রাট শাহসূজার অকাল প্রয়াত পুত্র ফিরোজশাহের নামে 'ফিরোজপুর' এবং পরে অপভ্রংশ হিসেবে 'পিরোজপুর' নামকরণ হয়েছে। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠির জনৈক হেলালউদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেষ বংশধর হিসেবে দাবী করেছিলেন। তাঁর মতে বাংলার সুবেদার শাহ্ সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে এসেছিলেন এবং আত্মগোপনের এক পর্যায় নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পারে একটি কেল্লা তৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয় এবং শাহ্ সুজা তার দুই কন্যাসহ আরাকানে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময় তার স্ত্রী  এক শিশু পুত্রসহ থেকে যায়। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ...