লিখেছেন : সাইফুল লিমন
প্রিয় শিক্ষকদের তালিকা বয়সের সাথে সাথে যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি বৃদ্ধি পেয়েছে আফসোসও, কেননা যখন স্কুল ছেড়ে কলেজে গিয়েছি তখন দুঃখবোধ হয়েছে,ইস্ স্কুলের শিক্ষকদের সাথে আর আগের মতো দেখা হবে না, যাদের কাছেই শিখেছি যে, চোখ দৃষ্টি সীমার বাইরেও কিছু দেখতে পারে, শিখেছি জীবন মানে অসাধারণ কিছু, যেটা একটা পুরস্কার।
যখন কলেজ ছেড়ে ইউনিভার্সিটিতে গেলাম তখন মনে হল, ইস্ কলেজের শিক্ষদের আর দেখতে পারবো না!
আবার যখন ইউনিভার্সিটি ছেড়েছি তখন মনে হয়েছে ইস্ এই অসাধারণ মানুষ গুলোর আর আগের মতো সান্নিধ্য পাবো না।
যারা শিখিয়েছে বর্তমান পৃথিবী দেখতে, যাদের কাছে শিখেছি ব্যক্তিত্ব গঠন, মুক্তচিন্তা।
তবে যখন প্রিয় শিক্ষকদের সাথে ঘটা ঘটনার কথা বলা হয় তখন আরো কনফিউজড লাগে কোনটা ছেড়ে কোনটা বলি।
তবে আজকে আমার হাইস্কুল জীবনের সবচেয়ে হাস্যকর (এখন হাস্যকর লাগলেও তখন ব্যাপারটা মোটেই হাস্যকর ছিলো না)।
আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র, প্রাইমারি ছেড়ে হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছি, বাচ্চামির ব্যাপারটা তখনো মনে খুব যত্নে লালন করি। স্কুলের সবচেয়ে ভয়ংকর শিক্ষক মনে হতো নুর-হোসেন স্যারকে, ইংরেজি পড়াতেন, উচ্চতা ৫ ফিট ৫" এর মতো, মাথায় কোকরানো চুল, গায়ের রং কালো, হাতে সব সময় একটা বেত থাকতো। যখন হেলে-দুলে হেটে আসতো তখন শুধু আমার নয়, স্কুলের সকল ছাত্রের বুক কেপে উঠতো।
একদিন ইংরেজি ২য় পত্র ক্লাস নিচ্ছিলেন, হঠাৎ জিজ্ঞেস করলো কে কে বই আনো নাই দাড়াও!
আমি প্রথমে ভয়ে দাড়ালাম না, দেখি অনেকেই বই নিয়ে আসে নাই। তখন দাড়ালাম। প্রায় ২০ জনের উপর ছাত্র লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার শেষে আমি। স্যার এক এক জনকে ৪ টা করে বেত মারবেন। প্রথমজন হাতে বেত পরতেই হাউমাউ শুরু করলো। এভাবে একজনের পর এক জন বেত খাচ্ছে, আর আমি সবার পিছনে বসে মনে মনে প্রার্থনা করছি। যতোই আমার দিকে এগিয়ে আসছে, আমার হৃদ স্পন্দন ততো স্পষ্ট হয়ে কানে আসছে।
আমার কাছে আসার এক জন আগেই, ঘন্টা বেজে উঠলো!
স্যার আমার দিকে তাকিয়ে হাসি মুখে বললেন "যা তোরে আইজ ছাইরা দেওয়ার নিয়ত করছি"
আমি আনন্দে হুর-রেএএএ বলে চিৎকার করে লাফ দিলাম।
এর মধ্যেই পশ্চাতদেশে শপাং শপাং দুইটা বেত পড়তেই পুরো পৃথিবী মনে হয় নিশ্চুপ হয়ে গেলো।
এরপর দেখলাম পুরো ক্লাস জুড়ে হাসি, স্যার হাসছেন, বন্ধুরা হাসছে, আমারো চোখে পানি মুখে হাসি!
এর পর ক্লাস টেন পর্যন্ত তার একটা না একটা ক্লাস আমরা পেতামই। আর তিনিও আমাদের সন্তানের মতো আগলে রেখেছেন দিনের পর দিন। এই রাগী শিক্ষকের কাছাকাছি না গেলে তার ভিতরের ভালো মানুষটাকে দেখতে পারতাম না।
হাইস্কুলের প্রিয় শিক্ষকদের সাথে এখনো বছরে দু এক বার দেখা হয়। বয়স বৃদ্ধি পায় আমাদের,সাথে সাথে তাল মিলিয়ে তাদেরও। আর আমার ইচ্ছা হয় সময়টা বন্ধ করে ফেলি। মন চায় আবারো স্কুলে ফিরে যাই, ফিরে পেতে চাই খেলার মাঠ, ফিরে পেতে চাই তাদের স্নেহ, ফিরে পেতে চাই শৈশব - কৈশোর এর সন্ধিক্ষণ।
Comments
Post a Comment