(১৯৭১ সালে স্বাধীনতার উষালগ্নে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে মঠবাড়িয়া উপজেলায় প্রথম শহীদ জিয়াউজ্জামান)
দিন আসে দিন যায়, কিন্তু সব দিনের আর তো ইতিহাস হয় না। ইতিহাস রচে যায় কিছু ক্ষনের,কিছু দিনের। তেমনি একটি দিন ১০ ই মে ১৯৭১ সাল সেই স্বাধিনতার প্রাক্কালে পিরোজপুরে মেধাবি ৭জন
#জিয়াউজজামান_গনপতি_মোস্তফা_মালেক_অমল_বিরেন_আনোয়ারুলকাদির_শ্যামবেপারী
তরতাজা যুবককে নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল স্বাধিনতা বিরোধী পাকিস্তানী বাহিনী। ওরা আসবে বলে আজো ফিরে আসেনি। ওদের লাশ পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। আজো এই প্রতিক্ষায় সেই মহান মে মাস।
মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতির পর্বে সবাই দিক বিদিক হোয়ে ছুটাছুটি। বংগবন্ধুর ৭ই মার্চ রেসকোর্স ময়দানে ভাষন পশ্চিমারা মেনে নিতে পারেনি। শুরু হয় বাংলার আকাশে দূর্যোগের ঘণঘটা...
কন্ট্রোল রুমের মুক্তিযোদ্ধা ফখরুদ্দিনের বিশ্বাসঘাতকার ফলে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত যে যেখানে আছো সবাই মুক্তি যুদ্ধের জন্য সুন্দরবনে সমেবেত হতে হবে। যাত্রা পথে ধরা পড়লেন দুই সহোদর ভাই ফারুকউজ্জান এবং জিয়াউজ্জামান। ধরিয়ে দিলেন চিরচেনা স্বাধিনতা বিরোধী ওই সাকু রাজাকার ছেলে বজলু রাজাকার।
মঠবাড়িয়ার থানায় আরো কয়েকজন তরুনের সাথে অমানবিক নির্যাতন। এভাবে কটাদিন অবশেষে কয়েকজন ছাড়া পেলো অনেক ত্যাগের বিনিময়ে। জিয়াউজ্জামান এবং ফারুকউজ্জান দুই সহোদর ভাই।
তাঁরা দুই সহোদর ভাইকে মা বাবার কোল খালি করে নিয়ে যাবে। সবাই অনুরোধ করলেন অন্ততপক্ষে একজনকে ছেড়ে দেয়া হোক।
কাকে ছেড়ে কে যাবে? সেটাই প্রশ্ন থেকে গেলো। মেঝভাই জিয়াউজ্জামান বললেন "ছোট ভাই ফারুক তুমি থাকো, আমি মাত্র কয়েকদিনের ভেতর আবার চলে আসবো, আমার নানা (তাঁর বাবা), আমার মা (তাঁর বড় বোন) অন্যান্যদের কে পান হাটার ওখানে রিক্সায় হ্যান্ডকাফ পরিহিত অবস্থায় এই কথা গুলো বলে গেলেন। সেই সময়ের এই টকবকে তরুন খুলনা আজমখান কমার্স কলেজের তুখোর ছাত্র জিয়াউজ্জামান তাঁর মুখ ছিল হাস্যজ্জল। তিনি জানতেন আর কখনো ফিরে আসবেন না। পরিবারের সবাইকে বললেন " আমার অসুস্থ মায়ের দিকে খেয়াল রেখো। রিক্সা ছেড়ে দিলো এক এক জন পুলিশ সাথে পাহারারত এভাবেই ৭জন। ইট বিছানো সলিং সরু রাস্তা দিয়ে আস্তে তুষখালির দিকে পিরোজপুরের গন্তব্যে সেই মঠবাড়িয়ার শ্রেষ্ঠ মেধাবী ছেলের দল আর কখনো ফিরে আসেনি মঠবাড়িয়ার চেনাজানা জনপদে। পিরোজপুর,১০ই মে ১৯৭১ তখন সন্ধ্যে ঘনিয়ে এলো। কিন্তু হঠাৎ শুরু হোল প্রচন্ড দাপটে ঝড়। চারিদিকে বাতাস আর বৃষ্টি মিলে একাকার সেই দামোদর নদীর চানমারি খেয়াঘাটের দিকে সারি করে চোখ বেঁধে তাঁদের সবাইকে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যায়। পাক ক্যাপ্টেন এজাজ জোড়ায় জোড়ায় স্বয়ং তার ষ্টেন গানের পর পর গুলী করে ঝাঁঝড়া করে দেয় তাজা তরুনের বক্ষপিঞ্জর। তলিয়ে যায় বহমান নদীর গর্ভে এক এক করে সবাই। সেই প্রচন্ড ঝড়ের বেগতিক তান্ডব কিছুক্ষন পর নিমিষেই থেমে যায় মহা কালের নির্মমতায়।
ওদের কারো লাশ পর্যন্ত কেউ খুঁজে পায়নি। তবে শোনা যায় কেউ কেউ গুলী খেয়ে বেঁচে ছিল। বাঁচার জন্য জেলেরা অথবা পাশের গ্রামের লোকজন সাহায্য করতে এগিয়ে এসে ব্যর্থ হয়েছিল কারন চারদিকে পাক সেনারা টহল দিতেছিল সেই এলাকায়। আর ফিরে আসেনি। শহিদ জিয়াউজ্জামান এর বৃদ্ধ মা আখতারুন্নিসা প্রায় চার যুগ অপেক্ষায় ছিলেন আমার ছেলে সত্যই ফিরে আসবেই। প্রতিদিন সকালে উঠে নামাজ পড়ে দরজা খুলে চেয়ে থাকতেন "এই বুঝি আমার খোকা চলে আসছে "। সে আর অজরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্নার বিলাপ " কই এখনো আসোনা কেন?" সারা জীবন তাঁর বাবা মাকে কাঁদতে দেখেছি সময় অসময়ে হয়তো আমাদের খোকা ফিরে আসবে। হ্যাঁ,তাদের খোকা ফিরে এসেছে লাল সবুজের পতাকায়। খোকা ফিরে এসেছে শাপলা পুকুর জলে। খোকারা সত্যিই ফিরে এসেছে চিরঞ্জীব স্বাধীনতার মুক্তো বাংলায়।😭
সত্যিই ভাবতেও অবাক লাগে
তুমি সেই শহিদ জিয়াউজ্জামান!
৭১ এর সেই বিজয়ী বীর শহিদ?
তোমার রক্তের ধারায় আমিও
তোমার উত্তরসূরি এক প্রজন্ম।
বলতে পারো এই বাংলার মুক্তো
আলোয় বেড়ে উঠেছি তোমার
রক্তে পাওয়া এই স্বাধিনতা।
পৎ পৎ করে উড়ছো তুমি
ঐ লাল সবুজের খচিত পতাকায়।
জাহিদুল জামি
লেখক (তার আপন ভাগ্নে), সাহিত্যিক,কলামিস্ট,সাংবাদিক, আন্তুর্জাতিক সমাজকর্মী।
Comments
Post a Comment