পিরোজপুর জেলার দ্বিতীয় বৃহত্তম উপজেলা বা থানা নেছারাবাদ। ১৭৯০ সালে পিরোজপুর থানার উত্তরাংশে কাউখালী গ্রাম সংলগ্নে কালীগঙ্গা নদীর তীরে কেওয়ারী গ্রামে কেওয়ারী নামে একটি থানা স্থাপিত হয়। কালের প্রবাহে কেওয়ারী গ্রাম কালীগঙ্গা নদীতে বিলীন হয়। পরবর্তীতে সময়ে প্রশাসনিক সুবিধার জন্য ১৯০৬ সালে কেওয়ারী থানা স্থানান্তরিত হয় এবং স্বরূপকাঠীতে উহা পূনঃ প্রতিষ্ঠিত হয়।১৯৮৩ সালের ২ জুলাই নেছারাবাদ উপজেলা সৃষ্টি হয়।
বাংলা-বিহার উড়িষ্যার নবাব আলীবর্দী খানের কাছ থেকে এক সনদ গ্রহণের মধ্য থেকে বাংলা ১১৪৯ সালে (ইংরেজি ১৭৪২ সাল) রতনদি কালিকাপুর পরগনার সৃষ্টি হয়। এ পরগনাটিতপ্পে নাজিরপুরের অংশসহ অন্যান্য অঞ্চল নিয়ে স্বতন্ত্রভাবে গঠিত হয়। জনৈক রত্নেশ্বরের পুত্র কৃষ্ণ রাম এ পরগনার সঙ্গে সংযুক্ত হন। নাজিরপুর এবং সেলিমাবাদ পরগনার বিচ্ছিন্ন অংশ থেকে এ পরগনার জন্ম।
স্বরূপকাঠী থানা সংশ্লিষ্ট অঞ্চল রতনদি কালিকাপুর পরগনার অর্ন্তগত ছিল। মূল জমিদার এপরগনার রাজস্ব যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারলে, এ জমিদারীর অংশ তিন জনে খরিদ করেন। তারা হলেন, স্বরূপ চন্দ্র গুহ, বৃন্দাবন চক্রবর্তী এবং চন্দ্রনাথ সেন। স্বরূপকাঠীর জমিদার স্বরূপ চন্দ্রগুহের পৈতৃক নিবাস এ অঞ্চলেই ছিল বলে লোকশ্রুতি আছে।
হীরালাল গুপ্তের স্বাধীনতা সংগ্রামে বরিশাল বইয়ের ১৭ পৃষ্ঠায় উদ্বৃত আছে যে, ১৮৮০সালের পূর্বে বরিশালে ১৭ জন উকিল এবং ব্যারিষ্টারের মধ্যে স্বরূপ চন্দ্রগুহ ছিলেন স্বনামধ্যন্য এবং বিশেষভাবে প্রসিদ্ধ। তিনি এতটা সম্মান এবং প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিলেন যে, তার সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না। তিনিআরবি, ফার্সি, উর্দু প্রভৃতি ভাষায় বিশেষ ব্যুৎপন্ন ছিলেন। তার অসাধারণ বক্তৃতা ক্ষমতা ছিল। তার ফার্সি ভাষায় বিশুদ্ধ উচ্চরণের সঙ্গে আইনের বক্তৃতা শোনবার জন্য প্রত্যহ আদালত গৃহে লোকে লোকারণ্য হত। স্বরূপ চন্দ্রগুহ ওকলাতি করে বহু অর্থ উপার্জন করেছিলেন এবং বহু অর্থ ব্যয়ে জমিদারীর অংশ ক্রয় করে, ‘‘রায় চৌধুরী’’ আখ্যা লাভ কনের। ১৮৬৯ খ্রিষ্টাব্দে (বাংলা ১২৭৬বঙ্গাব্দে) বন্যায় দক্ষিণ শাহবাজপুরের গ্রামগুলো বিধ্বসতস্ত হওয়ায় স্বরূপচন্দ্র ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার) টাকা বিনা সুদে দুর্গত জনগণের সাহায্যার্থে ঋণ দিয়েছিলেন। এ মহৎ ব্যক্তিত্বের নামে স্বরূপকাঠী থানার নামকরণ হয় বলে কথিত আছে। অন্যদিকে স্বরূপ চন্দ্র গুহের পুত্র গোবিন্দ চন্দ্র গুহের নাম অনুসারে স্বরূপকাঠীর সারেংকাঠী উইনিয়নের একটি গ্রামের নাম গোবিন্দ গুহ কাঠীহয়। এরপর তাকে মুনিনাগ নামে আখ্যায়িত করা হয়। সেখানে এখনও স্বরূপ চন্দ্রগুহের বংশধরেরা বসবাস করছেন।
স্বরূপকাঠী ছিল গভীর জঙ্গল এবং জলাভূমিতে পূর্ণ। স্বরূপ দত্ত নামে জনৈক আবাদকারীজঙ্গল আবাদ করেন। তিনি জঙ্গল আবাদ করে গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। স্বরূপকাঠীরদত্ত পরিবারও তার বংশধর। তার নামে স্বরূপকাঠী হয়েছে বলে অন্য একটি জনশ্রুতি আছে।
অন্যভাবে কথিত আছে যে, এককালে সন্ধ্যা নদীর তীরে গাছপালা, বন বাদারে আবৃত গ্রামটির নয়নাভিরাম দৃশ্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। স্বরূপে তার পরিচিয়ের বিস্মৃতিএবং বিস্তর ঘটে। যার কারণে স্থানটির নাম হয় স্বরূপকাঁটি বা স্বরূপকাঠী। স্বরূপ অর্থ স্বীয় বা নিজ রূপ এবং কাঁটি বা কাঠি অর্থ একনর কন্ঠহার (সোনারকাটিঁ)। ১৯৮৫ সালে শর্ষিণার বিখ্যাত পীর, এ অঞ্চলের বুজর্গ অলি, মহান সাধক হজরত মাওলানা নেসার উদ্দিন-এর নামে স্বরূপকাঠী থানার নাম পরিবর্তন করে নেছারবাদ থানা রাখা হয়।নেছারাবাদ উপজেলার আয়তন:৭৬.৮৯ বর্গমাইল বা ১৯৯.১৫ বর্গকিলোমিটার।
লিখেছেন:সিরাজুম মুনিরা
Comments
Post a Comment